যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে সহস্র শৈবালদাম বাঁধে আসি তারে।
যে জাতি জীবনহারা অচল অসাড়।
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।
ভাব-সম্প্রসারণ:
প্রবহমানতাই নদীর ধর্ম। নদী যেখানে তার গতিধারা হারিয়ে ফেলে সেখানে শৈবালসহ নানা ধরনের লতাগুল্মের জন্ম হয়।
তেমনি কোনো জাতি বা মানবজীবন যখন স্থবির হয়ে পড়ে নানারকম কু-সংস্কার/লোকাচার এসে জীবনের স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে দেয়।
স্রোতই নদীকে প্রবহমানতা বা গতি দান করে। আর এই প্রবহমানতা বা বক্তৃতা শক্তির অভাবই নদীর মৃত্যু।
সব জঞ্জাল, মালিন্য আর ক্লেদাক্ত আবর্জনা নদীর গতিধারায় ভেসে চলে যায়। গতিশীল নদীর জলরাশি সকল পঙ্কিল মলিন্যকে ধৌত করে উৎস থেকে সমুদ্রসঙ্গম পর্যন্ত বয়ে চলে। আর এ স্রোতধারার দুই পাশে নতুন নতুন সভ্যতার বিকাশ সম্ভব, করে। কোনো কারণে তার গতি মন্দীভূত হয়ে পড়লে স্রোতধারা রুদ্ধ হয়ে গতি স্থির হয়ে যায়।
“আর পড়ুনঃ” মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে।
তখন তার বুকে শৈবাল বা আবর্জনা বাসা বাঁধে। তেমনিভাবে মানবজীবনও নদীর মতো আপন গতিতে প্রবাহিত।
কিন্তু ব্যক্তিগত, সমাজ বা রাষ্ট্র জীবনে যদি স্থবির হয়ে পড়ে তখন জীবন হয় বিপর্যস্ত, অচল অসার। জীবন ও সমাজের স্বাভাবিক বিকাশধার ব্যাহত হয়। তখন সেখানে সংকীর্ণ আচার-প্রথা ও সংস্কার তথ্য লোকাচার এসে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির গতিপ্রবাহকে রুদ্ধ করে দেয়। পদে পদে শাস্ত্রের অনুশাসনে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সফল সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটায়। ফলে জাতিসত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়। এতে করে অনেক জাতির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বহু জাতি বিস্মৃতির অতল গর্ভে হরিয়ে গেছে। তাই ব্যক্তি বা জাতিসভাকে এরূপ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন জাতীয় সংস্কৃতির চর্চা, শিক্ষার প্রসার, মুক্তবুদ্ধির জাগরণ ঘটানো। কারণ এসবের চর্চার ফলে জাতীয় স্বকীয়তা উপলব্ধি, অশিক্ষা কুশিক্ষা ও কুসংস্কাররূপী সামাজিক ব্যাধি ও লোকাচারের হাত থেকে জাতি রক্ষা পাবে।
“আর পড়ুনঃ” অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সমদহে?(ভাব সম্প্রসারণ)
জীবন স্রোতহীন স্থির জলের মতো মন্থর নয় বরং বহমান।
তাই ব্যক্তি, সমাজ তথা জাতীয় জীবনে সকল কুসংস্কার, জড়তা, হীনম্মন্যতা, অন্ধবিশ্বাসকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সম্মুখে এগিয়ে যেতে হবে।